Responsive Ads Here

Monday, January 15, 2018

পদ্মাবতী বই এর রিভিউ


চরিত্রঃ
সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতীচিতোরের রাজা রত্নসেনদিল্লীর সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজিরাজা দেবপাল - এসকল চরিত্র নিয়ে রচিত কাল্পনিক কাহিনীর কাব্যরূপ পদ্মাবতী।

মূল কাহিনীঃ
রাজভবনের অদ্ভুত শুকপাখি – হীরামন পদ্মাবতীর অত্যন্ত প্রিয়। পদ্মাবতী ক্রমে যৌবনবতী হলে তাঁর রূপের সংবাদ সমস্ত ভূমণ্ডলে পরিব্যাপ্ত হলো। তাঁর বিয়ে হচ্ছে না দেখে হীরামন তাকে বললসে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে তার উপযুক্ত বর খুঁজে আনবে। এ সংবাদ শুনে রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে শুককে মারার আদেশ দিলেন। পদ্মাবতী অনুনয়-বিনয় করে শুকের প্রাণ রক্ষা করলেন। এরপর থেকে শুক সুযোগ খুঁজতে লাগল কোনোক্রমে রাজভবন ছেড়ে চলে যেতে। একদিন পদ্মাবতী মানসসরোবরে সখীদের সঙ্গে নিয়ে ম্লান করতে গেলে শুকপাখি এক সুযোগে বনে উড়ে গেল। চিন্তাশীল শুক সেই বনে এক ব্যাধের হাতে ধরা পড়ল। ব্যাধ শুককে সিংহলের হাটে নিয়ে বিক্রি করতে এলে চিতোরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আসা ব্রাহ্মণ শুকপক্ষীর জ্ঞান এবং পাণ্ডিত্যের কথা শুনে শুককে ক্রয় করে চিতোর দেশে এলেন। শুকের প্রশংসা শুনে চিতোরের রাজা রতœসেন লাখ টাকা দিয়ে হীরামন ক্রয় করলেন। এদিকে রানী নাগমতী শুকের কাছে পদ্মিনী রমণীগণের রূপের বর্ণনা শুনে ভাবলেনযদি এখানে এ-পাখি থাকে তাহলে একদিন না একদিন রাজা এসব শুনবেন এবং তাঁকে ছেড়ে পদ্মাবতীর জন্য গৃহত্যাগ করবেন। তিনি তাই ধাত্রীকে ডেকে শুককে হত্যা করতে আদেশ দিলেন। ধাত্রী পরিণামের কথা চিন্তা করে শুককে লুকিয়ে রাখল। রাজা ফিরে এসে শুককে না দেখে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলে শুককে অন্তরাল থেকে তাঁর সামনে আনা হলো। শুক সমস্ত বৃত্তান্ত শোনাল। রাজা পদ্মাবতীর রূপের দীর্ঘ বর্ণনা শুনে উৎকণ্ঠিত হলেন। ব্যাকুল হলেনতাঁর হৃদয়ে এমন প্রবল অভিলাষ জাগল যেতিনি হীরামনকে সঙ্গে নিয়ে সিংহল যাত্রা করলেন। নানা দুর্গম পথ অতিক্রম করে তাঁরা অবশেষে সিংহল দেশে মহাদেবের মন্দিরে উপস্থিত হলেন। জপতপ করার জন্য এবং পদ্মাবতীর ধ্যান করবার জন্য। হীরামন পদ্মাবতীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় রতœসেনকে বলে গেলবসন্ত পঞ্চমীর দিনে সে পদ্মাবতীর দর্শন পাবে এবং তাঁর আশা পূর্ণ হবে। অনেকদিন পর হীরামনকে পেয়ে পদ্মাবতী আনন্দে আকুল হলেন। হীরামন রতœসেনের রূপকুলশৌর্য ও ঐশ্বর্য বর্ণনা করল এবং বললরতœসেনই সবদিক থেকে তাঁর যোগ্য পুরুষ। পদ্মাবতী রতœসেনের ত্যাগ ও প্রেমের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিলেনবসন্ত পঞ্চমীর দিন পূজা উপলক্ষ করে রতœসেনকে দেখতে যাবেন ও তাঁকে জয়মাল্য দেবেন। বসন্ত পঞ্চমীর দিন পদ্মাবতী সখীদের নিয়ে মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে যেদিকে রতœসেন ছিলেন সেদিকেও এলেন। পদ্মাবতীর সঙ্গে রতত্নসেনের সাক্ষাৎ হলো। পদ্মাবতী রত্নসেনকে দেখে বুঝলেনশুক যে-কথা বলেছে তার কোথাও ত্রুটি নেই। পদ্মাবতী ও রত্নসেনের প্রণয়-সংবাদ পেয়ে পদ্মাবতীর বাবা রাজা গন্ধর্ব্যসেন ক্রুদ্ধ হলেন। রত্নসেনের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। এ সময় মহাদেবের আগমন এবং তার মধ্যস্থতায় অনেক আড়ম্বরের মধ্যে রত্নসেনের সঙ্গে পদ্মাবতীর বিয়ে হলো। এদিকে চিতোর বিরহিণী নাগমতী রাজার কথা ভেবে ভেবে এক বর্ষ কাটালেন। তাঁর বিলাপ শুনে পশুপাখি বিহ্বল হলো। একদিন অর্ধেক রাত্রে একটি পাখি নাগমতীকে তাঁর দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করলে নাগমতী তাঁকে রাজার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। পাখির কাছে নাগমতীর দুঃখের কথা এবং চিতোরের হীন দশার কথা শুনে রত্নসেনের মনে দেশের কথা উদয় হলো। তিনি চিতোরের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। যাত্রার প্রাক্কালে সমুদ্র রাজাকে অমূল্য রত্ন দিলো। এসব অমূল্য রতœ নিয়ে রত্নসেন ও পদ্মাবতী চিতোরে উপস্থিত হলেন। নাগমতী ও পদ্মাবতী দুই রানীকে নিয়ে রাজা সুখে সময় নির্বাহ করতে লাগলেন। চিতোরের রাজসভায় যক্ষিণী সিদ্ধপণ্ডিত রাঘবচেতন দ্বিতীয়া নিয়ে অন্য পণ্ডিতদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হলেন। মিথ্যা এবং সত্যের পরীক্ষায় রাঘবের অপকৌশল ধরা পড়লে রাজা রত্নসেন তাঁকে নির্বাসনদণ্ড দিলেন। রাঘবচেতন প্রতিশোধস্পৃহায় দুরভিসন্ধি করে পদ্মাবতীর কঙ্কণ নিয়ে দিল্লিতে পৌঁছলেন। বাদশাহ আলাউদ্দীন পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা শুনে ব্রাহ্মণকে অনেক আপ্যায়নের সঙ্গে রাজদরবারে স্থান দিলেন এবং রাজা রত্নসেনের কাছে পত্র দিলেন – ‘আমাকে পদ্মাবতী দাওতার বিনিময়ে যত রাজ্য চাও দেব।’ পত্র পেয়ে রাজা রত্নসেন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলেন এবং যুদ্ধের আহ্বান জানালেন। শুরু হলো রাজা-বাদশাহ যুদ্ধ। আলাউদ্দীন চিতোরগড় আক্রমণ করলেন। আট বছর পর্যন্ত তিনি চিতোর বেষ্টন করে রইলেনকিন্তু অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারলেন না। এ সময় দিল্লি থেকে সমাচার এলো আবার তাঁর রাজ্য আক্রমণ করেছে। বাদশাহ তখন গড়ে প্রবেশ অসাধ্য জেনে কপটতা করলেন। তিনি রত্নসেনের কাছে সন্ধির প্রস্তাব করলেন – ‘পদ্মাবতীর প্রয়োজন নেই,সমুদ্র থেকে তুমি যে পাঁচ অমূল্য বস্তু পেয়েছতা আমাকে দাও।’ রাজা স্বীকার করলেন এবং বাদশাহকে চিতোরগড়ের ভেতরে আমন্ত্রণ করলেন। কিছুদিন পর্যন্ত বাদশাহের আতিথ্য চলল। একদিন চলতে চলতে বাদশাহ পদ্মাবতীর মহলে এলেন। বাদশাহ পদ্মাবতীর মহলের সামনে এক স্থানে বসে রাজার সঙ্গে শতরঞ্জ খেলতে লাগলেন। সামনে এক দর্পণ রাখলেনযদি পদ্মাবতী দাঁড়ান তবে দর্পণে তাঁর প্রতিবিম্ব দেখতে পাবেন। কৌতূহলবশে পদ্মাবতী ঝরোখার কাছে এলেন আর তাঁর প্রতিবিম্ব দর্পণে পড়ল। বাদশাহ প্রতিবিম্ব দেখে হতচেতন হলেন। অবশেষে বাদশাহ বিদায় নিলেন। রাজা বিদায় দেবার জন্যে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চললেন। গড়ের এক সিংহদ্বারে বাদশাহ রাজাকে এক উপঢৌকন দিলেন। সর্বশেষ সিংহদ্বার অতিক্রম করার সময় রাঘবের ইঙ্গিতে বাদশাহ রত্নসেনকে বন্দি করে দিল্লিতে নিয়ে এক ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রাখলেন। পদ্মাবতী গোরা এবং বাদলের গৃহে গিয়ে তাদের অনুরোধ করলেন রাজাকে মুক্ত করে আনতে। আলাউদ্দীন যেমন প্রতারণা করে রতœসেনকে বন্দি করেছিলেনতারাও তেমনি অপকৌশলের সাহায্যে রাজাকে মুক্ত করবে সিদ্ধান্ত করল। ষোলোশো পাল্কির মধ্যে ষোলোশো সশস্ত্র রাজপুত যোদ্ধাকে রাখল এবং সর্বোত্তম পাল্কির মধ্যে বসাল একজন লোহারুকে। ঘোষিত হলো সর্বত্র যেরানী পদ্মাবতী ষোলোশো দাসী সঙ্গে নিয়ে রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন। দিল্লিতে বাদশাহের কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে বশীভূত করা হলো। কেউ পাল্কি অনুসন্ধান করল না। বাদশাহের কাছে খবর গেল যেপদ্মাবতী এসেছেন এবং অনুরোধ জানিয়েছেন যেরাজার সঙ্গে প্রথমে সাক্ষাৎ করে চিতোরের রাজভাণ্ডারের চাবি তাঁকে অর্পণ করতে চান। তারপর মহলে যাবেন। বাদশাহ অনুমতি দিলেন। রত্নসেনের বন্দিশালায় সুসজ্জিত পাল্কি পৌঁছল। পাল্কির ভেতর থেকে লোহারু বেরিয়ে এসে রাজার বন্ধন খুলল। রাজা সশস্ত্র হয়ে নিকটে প্রস্তুত একটি ঘোড়ায় আরোহণ করলেন। এদিকে পাল্কি থেকে ষোলোশো সশস্ত্র রাজপুত বেরিয়ে এলো। গোরা এবং বাদল রাজাকে নিয়ে চিতোর যাত্রা করল। আলাউদ্দীন এদের পশ্চাদ্ধাবন করলেনগোরা তখন এক হাজার সৈন্য নিয়ে বাদশাহকে বাধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। প্রচণ্ড যুদ্ধে গোরা সরজার হাতে নিহত হলো। ইতোমধ্যে রত্নসেন চিতোর পৌঁছলেন। চিতোরে পৌঁছেই রাজা পদ্মাবতীর কাছে দেবপালের ধৃষ্টতার কথা শুনলেন। সকালেই তিনি কুম্ভলনের অভিমুখে যাত্রা করলেন। রত্নসেন এবং দেবপালের মধ্যে দ্বৈরথ যুদ্ধ হলো। দেবপাল নিহত হলেন। রত্নসেন আহত অবস্থায় চিতোরে ফিরে এলেন এবং অল্পদিন পরেই প্রাণত্যাগ করলেন। প্রথা অনুযায়ী পদ্মাবতী ও নাগমতী রত্নসেনের চিতায় আরোহণ করতে গেলেন। তারপর জীবনবাস্তবতা ব্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে কাহিনির পরিসমাপ্তি ঘটে।


সংগ্রহ করা হয়েছেঃ উইকিপিডিয়া থেকে

No comments:

Post a Comment